সরকার প্রতীকের তোলা এই ছবিটা দেখে কুকুরটার সাথে একাত্মবোধের অনুভুতি হয়। যখন ছোট ছিলাম তখন নিজেকে আবিষ্কার করেছিলাম আশ্চর্য ও রহস্যময় এক দুনিয়ায়। আমার দিগন্তে তখন ছিল অনেক বড় বড় তালগাছ, যাতে বাবুই পাখিরা বাসা বান্ধতো। এমন একটা তাল গাছে একটা জ্বিনও থাকতো বলে জানতাম। আর দিগন্তের সীমানাটা ছিল একটা বাগিচা, সাবেক এক শ্মশান, আর আমি থমকে দাঁড়াইতাম তার ঠিক আগেই, মোটা শেওলার আস্তরণ পড়া একটা দীঘির সামনে। এই আশ্চর্য দুনিয়ায় নিজের অস্তিত্বটা সবসময়ই গুরাবা মনে হইছে। এখন আরো বেশি মনে হয়। কিন্তু ঐ রহস্যময় দুনিয়াটা আস্তে আস্তে নাই হয়ে গেছে, আর তার ভেদের আকাঙ্খা জাগানিয়া দিগন্তের সীমাগুলাও। নিজেকে আবিষ্কার করি এখন এক ডিসটোপিয়ায়, যেখানে পিতামহ বনস্পতিদের, আদনের বাগানে ছায়া দেয়া গাছগুলার লাশেদের কবর থেকে তুলে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে চলে সভ্যতার চাকা। তাল গাছগুলার জায়গা আস্তে আস্তে দখল করে নিল কারেন্টের খাম্বা। জ্বিন, সাঁপ, বাবুই পাখিরাও বিদায় নিল। কুকুরেরা অবশ্য রয়ে গেল। যেমন তারা রয়ে গিয়েছিল, আমাদের বেহেশত থেকে পতনের পরেও। কুকুর কেন আমাদের সাথে সাথে বেহেশত ত্যাগ করল? তাদেরতো পতিত হওয়ার দরকার ছিলনা। কেন তারা এখনো থেকে গেল এই জাহান্নামের দিকে প্রবল গতিতে ধাবমান বাস্তবতায়? তারা কী কোন না কোনভাবে আমাদের নাজাতের উসিলা হবে?

এই ছবিটা - কুকুর. ফটোগ্রাফার ও আমার দৃষ্টির সীমা একাকার করে দিয়ে যে দৃশ্য হাজির করে, তার মধ্যে অবশ্য এখনো ঐ পুরাতন ও রহস্যময় দুনিয়াটা ধরা পড়ে। এমনকি ঐ কারেন্টের তারগুলা, ও রেলগাড়িটাও। কী আছে ঐ রেলগাড়ির ঐ পাশে? কোথায় যাবে এই রেলগাড়ি? আমরাই বা কোথায় যাবো? যে পথে দাঁড়িয়ে আছি, সে পথ ধরেই চলে যাবো? নাকি ঐ রহস্যময় দিগন্তে পা বাড়াবো? হারাবো?

- পারভেজ আলম






COPYRIGHT© 2024 SARKER PROTICK